পঞ্চদশ অধ্যায়ঃ পুরুষোত্তমযোগ

শ্রীকৃষ্ণ বললেন- পণ্ডিতগণ বলেন- এই সংসার একটি অশ্বত্থবৃক্ষ। এর মূল উপরের দিকে এবং ডালগুলি নিচের দিকে। বেদমন্ত্র-সকল এর পত্রস্বরূপ। সংসাররূপ অশ্বত্থ বৃক্ষকে যিনি জানেন তিনিই বেদজ্ঞ।১

সেই অশ্বত্থ বৃক্ষের শাখাগুলি উপরের দিকে কিংবা নিচের দিকে যায়। আরও নিচে মনুষ্যলোকে এর মূল গিয়েছে।২

জীবগণ এই বৃক্ষের আদি, অন্ত ও মধ্য বুঝতে পারে না। বৈরাগ্যের দ্বারা এই বৃক্ষের মূল ছেদন করা যায়।৩

আদি পুরুষের শরণ নিয়ে সেই পরম পদ খুঁজতে হবে।৪

মোহ-মান, কামনা-বাসনামুক্ত ও সুখ-দুঃখমুক্ত জ্ঞানী ব্যক্তি ব্রহ্মপদ লাভ করে থাকে।৫

চন্দ্র, সূর্য ও অগ্নি যাকে প্রকাশ করতে পারে না; আমার পরম ধাম খোঁজ পেলে তার পুনর্জন্ম হয় না।৬

আত্মা আমার অংশ। কিন্তু পরম পদ লাভ না করা পর্যন্ত আত্মা বারবার পুনর্জন্ম গ্রহণ করে থাকেন।৭

আত্মা পুরাতন দেহ ছেড়ে ইন্দ্রিয় ও মনকে নিয়ে আবার নতুন শরীরকে আশ্রয় করে।৮

আত্মা দেহে থেকে জিহবা, কর্ণ, নাসিকা প্রভৃতি ইন্দ্রিয়গণের সাহায্যে বিষয় ভোগ করে।৯

অজ্ঞান ব্যক্তি ভোগে মত্ত থাকে। তাই সে আত্মাকে জানতে পারে না। কিন্তু জ্ঞানী ব্যক্তি আত্মার অবস্থা বুঝতে পারেন।১০

অবিবেকী ভোগী ব্যক্তি আত্মাকে বুঝতে পারে না। কিন্তু যোগী ব্যক্তি এই শরীরেই তাঁকে দেখতে পারেন।১১

চন্দ্র, সূর্য ও অগ্নি জগতকে প্রকাশিত করে। কিন্তু তারাও আমার নিকট হতে তেজ পেয়ে থাকে।১২

আমি নিজের বলে সকলকে ধারণ করি। আমিই চন্দ্র হয়ে শস্য পরিপুষ্ট করে থাকি।১৩

আমি জঠরাগ্নিরূপে প্রাণীদের শরীরে থেকে চার প্রকার অন্ন পরিপাক করে থাকি।১৪

আমি সকলের হৃদয়ে অধিষ্ঠান করি। আমা হতে স্মৃতি, বিস্মৃতি ও জ্ঞান জন্মে। বেদের জ্ঞাতব্য বিষয় ও বেদান্তের কর্তা আমি।১৫

পুরুষ দুই প্রকার- ক্ষর ও অক্ষর। সর্বজীবে ক্ষর পুরুষ ও কুটস্থ-পুরুষ অক্ষর পুরুষ।১৬

পরমাত্মা নামে একজন উত্তম পুরুষ আছেন। তিনি অব্যয় ও নিত্য। তিনি ত্রিলোক পালন করেন।১৭

উত্তম পুরুষ ক্ষর পুরুষের অতীত এবং অক্ষর পুরুষ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। আমিই সেই উত্তম পুরুষ। আমি পুরুষোত্তম।১৮

জ্ঞানী ব্যক্তিগণ আমাকে পুরুষোত্তম বলেই জানেন। জেনে তাঁরা সর্বদাই আমার ভজনা করেন।১৯

হে অর্জুন- এই গোপনীয় বিদ্যা তোমাকে বললাম, এটি জানলে জ্ঞানী ও কৃতার্থ হওয়া যায়।২০

* পঞ্চদশ অধ্যায় সমাপ্ত *

মন্তব্যসমূহ