সপ্তদশ অধ্যায়ঃ শ্রদ্ধাত্রয় বিভাগযোগ

অর্জুন বললেন- হে কৃষ্ণ, যারা শাস্ত্রের বিধান মেনে চলে না অথচ শ্রদ্ধার সাথে ভজনা করে তাদের শ্রদ্ধা কীরূপ?১

শ্রীকৃষ্ণ বললেন- হে অর্জুন, শ্রদ্ধা তিন প্রকার- সত্ত্ব, রজঃ, তমঃ। এরা স্বভাবজাত।২

যার যেমন মনের ভাব তার তেমন শ্রদ্ধা হয়ে থাকে।৩

সাত্ত্বিক শ্রদ্ধার লোকে দেবতার, রাজসিক শ্রদ্ধার লোকে যক্ষরাক্ষসাদির এবং তামসিক গুণের লোকে ভূত-প্রেতের পূজা করে।৪

যারা অহংকারবশে শাস্ত্রের বিধান না মেনে কঠোর তপস্যা ক'রে আসক্তিপরায়ণ এবং বলশালী হয়ে শরীরস্থ ভূতসমূহকে কষ্ট দেয় এবং শরীরস্থ আমাকেও ক্লেশ প্রদান করে তারা আসূর প্রকৃতি বলে জানবে। তারা শরীরের মধ্যস্থিত আত্মারূপী আমাকে দেখতে পায় না।৫-৬

প্রকৃতি-ভেদে সকলেরই আহার তিন প্রকার- যজ্ঞ, দান এবং তপস্যা। তপস্যাও তিন প্রকার।৭

সাত্ত্বিক আহার নরম, স্নিগ্ধ ও প্রীতিকর। এতে স্বাস্থের উন্নতি হয়।৮

রাজসিক আহার অতি তিতা, অতি টক, অতি নোন্তা ইত্যাদি। তাতে দুঃখ, রোগ ও শোক জন্মে।৯

দুর্গন্ধযুক্ত, বাসি, এঁটো অপবিত্র- এইসব তামসিক আহার।১০

যিনি ফলের আকাঙ্ক্ষা না করে যজ্ঞ ও দান করে থাকেন তিনি সাত্ত্বিক, শ্রেষ্ঠ।১১

হে অর্জুন, যে ব্যক্তি ফলের আকাঙ্ক্ষা ক'রে কাজ করে সেই কর্মকে রাজসিক কর্ম বলে জানবে।১২

শ্রদ্ধাশূন্য, বিধিহীন এবং দক্ষিণাবিহীন যে যজ্ঞ দানাদি তাতে তামসিক বলে জানবে।১৩

দেবতা, ব্রাহ্মণ, গুরু ও জ্ঞানী লোকের পূজা, শরীর ও মনের পবিত্রতা, সরলতা, ব্রহ্মচর্য, অহিংসা- এইগুলো শারীরিক তপস্যা।১৪

সত্য, প্রিয় ও হিতকর বাক্য এবং বেদপাঠ- এইসব বাচনিক তপস্যা।১৫

চিত্তের প্রসন্নতা, বাকসংযম, মনঃসংযম ও অকপটতা- এইসব মানসিক তপস্যা।১৬

ফলের আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ ক'রে যিনি কায়িক, বাচনিক ও মানসিক তপস্যা করেন তাঁর তপস্যা সাত্ত্বিক তপস্যা।১৭

যে ব্যক্তি লোকের প্রশংসা পাওয়ার জন্য অহংকারের সাথে তপস্যা করে তার তপস্যা রাজসিক তপস্যা।১৮

যে ব্যক্তি নিজের শরীরকে কষ্ট দেয়ার জন্য বা অন্যের সর্বনাশ করার জন্য কষ্ট দেয় তার সেই তপস্যা তামসিক তপস্যা।১৯

"দান করা কর্তব্য"- এই ভেবে দেশ, কাল ও পাত্র হিসাবে অনুপকারী ব্যক্তিকে যে দান করা হয় তা সাত্ত্বিক দান।২০

প্রতিদিন বা স্বর্গলাভের আশায় যে দান করা হয় তা তামসিক দান।২১

অস্থানে, অসময়ে বা অপাত্রে যে দান বা তাচ্ছিল্যের সাথে যে দান তা তামসিক দান।২২

"ওঁ তত্‍সত্‍"- এটি ব্রহ্মের নাম। এই নাম হতেই ব্রাহ্মণ, বেদ ও যজ্ঞের সৃষ্টি হয়।২৩

সেই জন্যই ব্রহ্মবাদিগণ "ওঁ" উচ্চারণ ক'রে শাস্ত্রীয় কার্য করেন।২৪

মুক্তিকামী ব্যক্তিগণ ফলের আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করে "তত্‍" উচ্চারণ করে কার্য করেন।২৫

কর্মিগণ "আছে" অর্থ ও "উত্তম" অর্থ বুঝাতে এবং মঙ্গল কার্য্যে "সত্‍" শব্দ ব্যবহার করে থাকেন।২৬

যজ্ঞ, তপস্যা ও দানে যে নিষ্ঠা তা "সত্‍" নামে অভিহিত হয় এবং ভগবত্‍ প্রীতির জন্য যেসকল কাজ তাও "সত্‍" বলে কথিত হয়।২৭

অশ্রদ্ধার সাথে যজ্ঞ দান বা যা-কিছু করা হয় তা কখনো "সত্‍" নয়। ইহলোক ও পরলোকে তাতে কোন শুভ ফলই হয় না।২৮

* সপ্তদশ অধ্যায় সমাপ্ত *

মন্তব্যসমূহ