দ্বিতীয় অধ্যায়ঃ সাংথ্যযোগ (পৃষ্ঠা-২)

বৈদিক কর্মকারীর কাম্য কেবল ভোগ, তাই বৈদিক কর্ম করে কেও ঈশ্বরে একনিষ্ট হতে পারে না।৪৪

বেদ ত্রিগুণবিষয়ক- হে অর্জুন, তুমি গুণাতীত হও।৪৫

জলপূর্ণ স্থানে যেরূপ কূপের প্রয়োজন হয় না, সেরূপ ব্রহ্মজ্ঞানী ব্যক্তিরও বেদের প্রয়োজন নেই।৪৬

কর্মেই তোমার আধিকার, কর্মফলে অধিকার নেই।৪৭

অতএব কর্মফলের আশা না করে তুমি কর্ম করে যাও। ফলাফল সমজ্ঞানই যোগ।৪৮

সকাম কর্ম নিকৃষ্ট, নিষ্কাম কর্ম শ্রেষ্ঠ। হে অর্জুন, যে ব্যক্তি ফলের আকাঙ্ক্ষায় কর্ম করে সে নিকৃষ্ট।৪৯

জ্ঞানী ব্যক্তি
পাপপুণ্যত্যাগী। কর্মের কৌশলকেই যোগ বলে। হে অর্জুন, তুমি যোগী হও।৫০

জ্ঞানীগণ কখনো কর্মফল চান না। তাঁরা কর্মের বন্ধন হতে মুক্তি লাভ করেন।৫১

নিষ্কাম কর্ম করতে করতে বাসনা দূর হবে। বাসনা দূর হলে মন স্থির হবে।৫২

নিষ্কাম কর্মের দ্বারা যখন তোমার মন স্থির হবে তখনই অভ্যাস বশে তোমার যোগ লাভ হবে।৫৩

অর্জুন বললেন- হে কৃষ্ণ, স্থিরবুদ্ধি ব্যক্তি বলতে কাকে বুঝায়? তার লক্ষণ কী? সে কীরূপে কার্যাদি করে?৫৪

শ্রীকৃষ্ণ বললেন- যিনি সমস্ত কামনা-বাসনা ত্যাগ করে সর্বদা সন্তুষ্ট থাকেন তিনিই স্থিরবুদ্ধি।৫৫

যিনি সুখ, দুঃখ, ভয়, ক্রোধ কিছুতেই বিচলিত হন না তিনিই স্থিরবুদ্ধি।৫৬

যিনি শুভ ও অশুভ কিছুতেই বিচলিত হন না এবং যিনি আসক্তিশূন্য তিনিই স্থিরবুদ্ধি।৫৭

যিনি কচ্ছপের মত নিজের ইন্দ্রিয়গণকে সংকুচিত রাখেন সেই সংযত ব্যক্তিই স্থিরবুদ্ধি।৫৮

ইন্দ্রিয়ের দ্বারা বিষয় ভোগ না করলেই বিষয়-তৃষ্ণা দূর হয় না। পরম পুরুষকে দেখে যাঁর বিষয় বাসনা দূর হয়, তিনিই স্থিরবুদ্ধি ব্যক্তি।৫৯

হে অর্জুন, ইন্দ্রিয়গণকে জয় করা সহজ নয়। তারা সকলে বিবেকী ব্যক্তির চিত্তকে বিষয়ে আকৃষ্ট করে।৬০

মত্‍পরায়ণ হয়ে ইন্দ্রিয় সংযম কর। জিতেন্দ্রিয় ব্যক্তিই স্থিরবুদ্ধি হয়ে থাকেন।৬১

বিষয়ের চিন্তা করলে আসক্তি জন্ম। আসক্তি হতে কাম, কাম হতে ক্রোধ জন্মে।৬২

ক্রোধ হতে মোহ জন্মে। মোহ হতে স্মৃতিনাশ হয়। স্মৃতিনাশ হলে বুদ্ধিনাশ হয়। বুদ্ধিনাশ হলে বিনাশ ঘটে।৬৩

জিতেন্দ্রিয় ব্যক্তি বিষয়ে থেকেও আত্মপ্রসাদ লাভ করে থাকেন।৬৪

আত্মপ্রসাদ লাভ হলে সকল দুঃখ দূর হয়। দুঃখ দূর হলে স্থিরবুদ্ধি প্রকাশিত হয়।৬৫

যার চিত্ত সংযত এবং চিত্ত প্রসন্ন নয়, তার সুখ শান্তি লাভ হয়।৬৬

বাতাস যেমন সমুদ্রে নৌকা ডুবিয়ে দেয়, সেরূপ ইন্দ্রিয়গণও অসংযত ব্যক্তির মন হরণ করে থাকে।৬৭

ইন্দ্রিয়গণ সর্বপ্রকারের বিষয় হতে নিবৃত্ত হলে মন স্থির থাকে।৬৮

আত্মদর্শী ব্যক্তি যাতে জাগ্রত থাকেন, বিষয়ী ব্যক্তি তাতে নিদ্রিত থাকে। বিষয়ী ব্যক্তি যাতে নিদ্রিত থাকে, আত্মদর্শী ব্যক্তি তাতে জাগ্রত থাকেন।৬৯

সমুদ্র মধ্যে যত নদীই প্রবেশ করুক না কেন সমুদ্র স্থিরই থাকে। সেই যোগী ব্যক্তি সকল কামনার মধ্যেও স্থির থাকেন, কিন্তু কামনাপরায়ণ ব্যক্তি স্থির থাকতে পারে না।৭০

যিনি কামনা ত্যাগ করেন তিনি নিঃস্পৃহ। নিঃস্পৃহ ব্যক্তি শান্তি লাভ করেন।৭১

হে অজুন, এটিই ব্রাহ্মীস্থিতি (অর্থাত্‍ ব্রহ্মজ্ঞানে অবস্থান)। এই অবস্থা প্রাপ্তিতে মোহ দূর হয়ে মোক্ষ লাভ হয়।৭২